এই ধরনের ভাটায় চিমনির মধ্যে বাতাস আঁকাবাঁকা পথে বাতাস চলাচল করে বলে সব ইটের দহন সমান হয় কারণ তাপ সমান ভাবে সব নির্মীয়মান ইটের সংস্পর্শে আসে। তাই সাবেক পদ্ধতির যে ভাটা রয়েছে তার থেকে এই নতুন প্রযুক্তির ভাটায় ইটের মান অনেক উন্নত হয়।
এই ধরনের ইটভাটার উৎপত্তি সুইৎজারল্যান্ডে। জ্যাকব বুহার (Jacob Buhrer) নামে এক ব্যক্তি 1868 সালে নতুন এই ইটভাটার প্রবর্তন করেন। বুহার ইটভাটার হফম্যান ইটভাটার তৈরী পদ্ধতির সাথে মিল ছিল। আবিষ্কার কর্তার ওই ইটভাটার নাম ছিল বুহরার ইটভাটা, যেখানে প্রথম এই প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়। সাবেক ইটভাটায় শুধু বাতাস চলাচলের পথের কিছুটা অদলবদল করে দেওয়া হয়েছিল। সোজা পথের বদলে আঁকাবাঁকা পথ। ভাটার মুখে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল একটি পাখা। পাখার হাওয়ায় আঁকাবাঁকা পথে উত্তপ্ত বাতাস ভাটার সুড়ঙ্গপথে ছুটে যাওয়ায় তা ধাক্কা খেতে খেতে যায়। এর ফলে সুড়ঙ্গের প্রতিটি কোণায় পৌঁছে যায় আগুন। প্রতিটি ইটে সমানভাবে পৌঁছে যায় তাপ।
সুইৎজারল্যান্ড থেকে নতুন এই প্রযুক্তি জার্মানির হাবলা ভাটায় ব্যবহার করা হয়। প্রথম এবংদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মানিতে এই নতুন প্রযুক্তির ভাটার ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। পরবর্তীকালে তা অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতেও জনপ্রিয় হয়। 1970-য়ের গোড়ায় কেন্দ্রীয় ভবন নির্মাণ গবেষণাসংস্থা বা CBRI (Central Building Research Institute) এই প্রযুক্তি ব্যবহারে অনুমোদন দেয়। ভারত থেকে এই প্রযুক্তি ছড়িয়ে পড়ে নেপাল ও বাংলাদেশে। সেইসময় ওই ভাটার সুড়ঙ্গে বাতাসের চাপ বাড়ানোর জন্য ফ্যান ব্যবহার করা হত। ওই প্রযুক্তিকে বলা হত উচ্চচাপের আঁকাবাঁকা পথের ইটভাটা।
তারপরের 40 বছরে এই প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা কিন্তু কম হয়নি। সুড়ঙ্গের ভিতরে উচ্চচাপের বাতাস চালনা করার জন্য প্রযুক্তির বেশ কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। সম্প্রতি ইটভাটার মালিকেরা ফ্যানের ব্যবহার বন্ধ করে দিয়ে, চিমনির উচ্চতা অনেকটা বাড়িয়ে স্বাভাবিক নিয়মে ভাটার ভিতরে উচ্চচাপের এলাকা তৈরী করতে সমর্থ হয়েছেন।
নতুন প্রযুক্তির ভাটার বিশেষত্বগুলি কি কি?
নতুন প্রযুক্তির ভাটায় সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে আগুনও গরম বাতাস আঁকাবাঁকা পথে এগোয়। একটি দুটি তিনটি সমান্তরাল পথে সুড়ঙ্গ তৈরি করা থাকে। সেই পথে আগুনও গরম বাতাস এগিয়ে যায়।
সুড়ঙ্গ কতটা চওড়া এবং তাতে বায়ুর চাপ কতটা তার উপরে নির্ভর করে ইট কটা সারিতে সাজানো থাকবে। যদি একটি সারিতে ইট সাজাতে হয় তার জন্য সুড়ঙ্গের প্রস্থ এবং বায়ুর চাপ তুলনামূলক ভাবে বেশি রাখতে হয়। কারণ যতো বেশি আঁকাবাঁকা পথ তৈরি হবে, ভাটার মধ্যে বায়ুর চাপ ততো বেশি হবে। আর পাশাপাশি একাধিক সারি থাকলে জায়গারও সাশ্রয় হবে। সুড়ঙ্গের প্রস্থ যতো বাড়ে বায়ু তো তবে শিকরে সুড়ঙ্গের মধ্যে ঘুরপাক খায়। বায়ুর চাপ বেড়ে যায়। বড় বড় ভাটায় এখন সব সারিতে ইট সাজানো হয়। অর্থা চারটি সমান্তরাল আঁকাবাঁকাপথে গরম বাতাসও আগুন সুড়ঙ্গের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে।
দুই ধরনের:
NDZK ভাটা | IDZK ভাটা |
বাতাসের চাপের বিভেদ তৈরি করা |
|
চিমনি বাতাসের চাপের বিভেদ তৈরি করার কাজটা করে। | চিমনির মেঝেতে ফ্যান বসিয়ে করা হয়। |
চিমনির ভূমিকা |
|
প্রথমত ভাটার ভিতরে নিম্নচাপ এলাকা তৈরি করা এবং ভাটায় উৎপন্ন গ্যাস অনেক উঁচুতে নির্গত করায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পরিবেশ আইন অনুযায়ী চিমনীর উচ্চতা নির্ধারিত হয়। | প্রধানত ভাটার ভিতরে উৎপন্ন গ্যাস বাইরে নির্গত করা। |
চিমনির উচ্চতা |
|
130-150 ফুট (ভাটার ভিতরে কতটা নিম্নচাপ এলাকা তৈরি করা হবে তার উপরে উচ্চতা নির্ভর করে )l | 80-90 ফুট (কত উঁচুতে গ্যাস ছাড়তে হবে তার উপরে উচ্চতা নির্ভর করে) পরিবেশ আইন অনুযায়ী চিমনীর উচ্চতা নির্ধারিত হয়। |
ভাটাচালু করতে বায়ুর শক্তি কতটা প্রয়োজন |
|
6-8 মিলিমিটার উচ্চতার জলের চাপের শক্তিতেই ভাটা চালু করা যায়। | ভাটা চালু করতে 30-50 মিলিমিটার উচ্চতার জলের চাপের শক্তি প্রয়োজন। |
ইটের সারি |
|
সাধারণত দুটি বা তিনটি সারিতে ইট সাজানো হয়। | সাধারনত একটি সারিতেই সাজানো থাকে ইট। |
প্রতিসারিতেইটেরসংখ্যা |
|
ইট গুলির মধ্যে ফাঁক রাখা হয় তাই প্রতি সারিতে ইটগুলি ঘেঁষাঘেঁষি করে সাজানো হয়, ফলে প্রতি ইটের সংখ্যা থাকে কম। | সারিতে ইটের সংখ্যা থাকে কম বায়ুর চাপ তৈরি করতে ফ্যান চালাতে হয়।তাই। |
বিদ্যুৎ কিংবা জ্বালানির খরচ |
|
নেই। | বিদ্যুৎ কিংবা ডিজেলের প্রয়োজন হয়। |
শক্তি খরচ, উৎপাদিত ইটের মান এবং দূষণের নিরিখে ভাটার দক্ষতা কীভাবে যাচাই করা হয় তা নীচে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে-
এই ধরনের ইটভাটার একাধিক সুবিধা রয়েছে।