সাবেক ইটভাটায় যেভাবে ইট সাজানো হয়, নতুন প্রযুক্তির ভাটায় ঠিক সেইভাবে ইট সাজানো থাকে না। এখানে সাধারণত দুটি বা তিনটি সারিতে আঁকাবাঁকা পথে ইট সাজানো থাকে। বড় ভাটা গুলিতে অবশ্য এখন আঁকাবাঁকা পথে চার সারিতেও ইট সাজানো হচ্ছে।
সাবেক ভাটায় উল্লম্ব ভাবে সুড়ঙ্গের প্রস্থ বরাবর প্রতিটি সারিতে ইট সাজানো থাকে। আগুনের গতিপথ অনুযায়ী ইট পরপর সারিতে সাজানো হয়।
সাবেকি ইট ভাটার মতো নতুন প্রযুক্তির ভাটাতেও সুড়ঙ্গের প্রস্থ বরাবর উল্লম্বভাবে প্রতিটি সারিতে ইট সাজানো হয়। তবে সাবেক ভাটার মতো এক্ষেত্রে প্রতিটি সারির প্রস্থ এক থাকে না। প্রতিটি প্রকোষ্ঠে পাঁচটি সারি এমনভাবে সাজানো হয় যে পর্যায়ক্রমে প্রস্থ বাড়তে বাড়তে যায়।
এখানে ইট সাজানোর পদ্ধতি যেহেতু ভিন্ন, তাই দুই ধরনের ভাটায় বাতাস ভিন্নপথে এগোয়। সাবেক ভাটায় বাতাস সুড়ঙ্গের ভিতরে সোজাপথে এগোয়। নতুন প্রযুক্তির ভাটায় বাতাস সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্যপ্রস্থ বরাবর ধাক্কা খেতে খেতে এগোয়, তার ফলে বাতাসের গতিপথ আঁকাবাঁকা হয়। কীভাবে বায়ুকে এমনপথে চালনা করাহয় তার ব্যাখ্যা পরে দেওয়া হয়েছে।
প্রকোষ্ঠের দৈর্ঘ্য-প্রস্থকে মনভাবে ঠিক করা হয়?
প্রকোষ্ঠে ইট যে নিয়মে সাজানো থাকে তা হল-
দুই ধাপের আঁকাবাঁকা পথের ভাটায় প্রকোষ্ঠের পঞ্চম সারির গায়ে দুটি বায়ুপথ থাকে। সুড়ঙ্গের দুই প্রান্তে বায়ু পথ গুলি (প্রান্তীয়বায়ুপথ) উম্মুক্ত হয়। পরের প্রকোষ্ঠে পঞ্চম সারির বায়ুপথ গুলি সুড়ঙ্গের মাঝামাঝি এলাকায় উম্মুক্ত হয়। এইভাবে পর্যায়ক্রমে বায়ুপথগুলি কখনও সুড়ঙ্গের মাঝামাঝি, কখনও বা সুড়ঙ্গের দুইপাশে উম্মুক্ত হয়। এইভাবে বায়ুপথ উম্মুক্ত হওয়ায় সুড়ঙ্গের ভিতরে বাতাস আঁকাবাঁকা পথ ধরে এগোয়।
দুইধাপের ভাটায় বাতাস পর্যায়ক্রমে দুইপ্রান্তীয়বায়ু পথ এবং মাঝখানের বাযুপথ দিয়ে বাতাস যাওয়া আসা করে। তাতেই বাতাস এঁকেবেঁকে চলতে বাধ্য হয়।
প্রান্তীয়বায়ুপথ দিয়ে বাতাস যখন প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করে (ছবিতে প্রথম প্রকোষ্ঠে যেমন দেখানো হয়েছে),তা প্রকোষ্ঠের প্রস্থ বরাবর ভিতর দিকে প্রবাহিত হয়। পরের প্রকোষ্ঠের মাঝখানের বায়ুপথ দিয়ে তা বাইরে বেরিয়ে যায়।
বাতাস যখন মাঝখানের বায়ুপথ দিয়ে প্রকোষ্ঠে ঢোকে (ছবিতে দ্বিতীয় প্রকোষ্ঠে যেমন দেখানো হয়েছে)তখন তা প্রকোষ্ঠের প্রস্থ বরাবর বাইরের দিকে প্রবাহিত হয়। পরের প্রকোষ্ঠের প্রান্তীয় বায়ুপথ দিয়ে তা বাইরে বেরিয়ে যায়।
পাশাপাশি দুটি প্রকোষ্ঠে পর্যায়ক্রমে এই দুই বিপরীতমুখী গতিপথেই বাতাস এঁকেবেঁকে এগোতেথাকে।
নতুন প্রযুক্তির ইট ভাটায় আয়তক্ষেত্রকার সুড়ঙ্গপথের বড় দৈর্ঘ্য বরাবরই প্রধানত ইট সাজানো হয়। অনেক ক্ষেত্রে সাবেকি ভাটার মতো সুড়ঙ্গের কম দৈর্ঘ্য বরাবরও নতুন প্রযুক্তির ভাটায় ইট সাজানো হয়। এই কম দৈর্ঘ্যের অঞ্চলকে বলে গলি।
এই গলিতে কিন্তু ইটের প্রতিটি সারিতেই সমসংখ্যক ইট থাকে। আঁকাবাঁকা পথ ছেড়ে বাতাস এই অঞ্চলে সোজা পথে যায়। গলির প্রবেশও নিষ্ক্রমণ পথে সুড়ঙ্গের বাইরের দেওয়াল ঘেঁষে বায়ু পথ রাখা হয়। এই ব্যবস্থায় বাতাস সুরঙ্গের একেবারে প্রান্তীয় এলাকায় দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর ফলে যত বেশি সম্ভব ইট সমান তাপ গ্রহণ করতে পারে।